এক কলেজছাত্রীর সাহসিকতা এবং একটি ফেসবুক গ্রুপের তৎপরতায় টাঙ্গাইলে নারী উত্যক্তকারী একটি চক্রের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে। পুলিশ মঙ্গলবার এই চক্রের চারজনকে গ্রেফতার করেছে। এ চক্রের প্রত্যেক সদস্যকে গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী জানান, শহরের ভিক্টোরিয়া রোডের ক্যাপসুল মার্কেট এলাকায় একদল বখাটে যুবক আড্ডা দেয়। তারা ওই মার্কেটের পাশের রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী স্কুল ও কলেজের ছাত্রীসহ নারীদের উত্ত্যক্ত করে। নানা অশ্লীল অঙ্গভঙ্গিও প্রদর্শন করে।
রোববার ওই ছাত্রী ক্যাপসুল মার্কেটের পেছনের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় এক বখাটে যুবক তাকে উদ্দেশ করে অশ্লীল মন্তব্য করে। মেয়েটি এর প্রতিবাদ করলে ওই যুবকের সঙ্গে তার কয়েক সহযোগী এসে আরও অনেক কটূক্তি করে। একপর্যায়ে উত্ত্যক্তকারী যুবকের ছবি মোবাইল ফোনে ধারণ করে ওই মেয়ে।
পরে উত্ত্যক্তকারীর ছবি STAND AGAINST RAPE- হোক প্রতিরোধ’ নামক একটি ফেসবুক গ্রুপের ম্যাসেঞ্জারে পাঠিয়ে দেন। ওই ফেসবুক গ্রুপের অ্যাডমিন টাঙ্গাইলের সন্তান বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক ইমরান কায়েস উত্যক্তকারীর যুবকের ফেসবুক আইডিতে ঢোকেন।
সেখানে দেখা যায়, উত্যক্তকারী ওই যুবক শহরের থানাপাড়া এলাকার মফিজুল আলমের ছেলে তৌহিদ রহমান ওরফে রাতুল। রাতুল ও তার দলের সদস্যরা বিভিন্ন সময় ক্যাপসুল মার্কেট এলাকায় নারীদের উত্ত্যক্ত করে তার ভিডিওচিত্র ফেসবুকে ছেড়ে দিত। এ ধরনের উত্ত্যক্ত করার একটি দৃশ্য রাতুলের ফেসবুক থেকে নামিয়ে সোমবার STAND AGAINST RAPE- হোক প্রতিরোধ’ গ্রুপে পোস্ট করেন ইমরান কায়েস। একই সঙ্গে এদের প্রতিরোধের আহ্বান জানান।
এই ভিডিও সোমবার রাতের মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান অসংখ্য মানুষ। উত্ত্যক্তকারীদের শাস্তির দাবিতে শত শত মানুষ নানা মন্তব্য করেন। এ বিষয়টি নজরে আসে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায়ের। সোমবার রাতেই উত্ত্যক্তকারীদের গ্রেফতারের জন্য গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক দলকে দায়িত্ব দেন।
পুলিশ মঙ্গলবার সকালে উত্ত্যক্তকারী দলের মূলহোতা তৌহিদুর রহমান ওরফে রাতুল (২০), এনায়েতপুর এলাকার কাউছার আহমেদ (২৮), বাঘিল ইউনিয়নের বিলমুড়িল গ্রামের রবিন হাসান (২০) ও রাকিব আলমকে (২১) গ্রেফতার করে।
এদিকে বিকালে ৩টার দিকে এই উত্ত্যক্তকারী দলের সদস্যদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে ক্যাপসুল মার্কেটের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন চলাকালে টাঙ্গাইল ক্লাবের সহসভাপতি হারুন অর রশীদ, টাঙ্গাইল চেম্বার অব কমার্সের সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া, নাট্যকর্মী সাম্য রহমান, সরকারি সাদত কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক কুশল ভৌমিক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় জানান, উত্ত্যক্তকারী এই চক্রের প্রত্যেক সদস্যকে চিহ্নিত করে গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।